Background

গার্মেন্টস কর্মীরাই কেন বার বার শিকার হচ্ছে ?

গরীব হয়ে জন্মালে বুঝি এইভাবেই মরতে হবে!!! বাংলাদেশের সর্বত্র কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনে আমরা আর কত নিরিহ অসহায় মানুষের লাশ দেখব ?! সকালে সুস্থ - সবল মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে কাজ করতে যাবে আর বিকালে অন্যের কাঁধে চরে লাশ হয়ে বাড়ী ফিরবে ! অবৈধ উপায়ে কাজ হাসিল ও সেটা সম্পাদন করাটা এখন আমাদের জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ছোটখাটো পেশার লোকজন তো যেন ঢাকা শহরে কুকুর - বিড়ালের মতো বাস করতে বাধ্য হচ্ছে । আর তাই সারা জীবন পেটের দায়ে কষ্ট করে কাজ করে  মরার ময়ও মানুষের কুনা নিয়ে মরতে হবে !! কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা কোথায় ? কর্মীদের জীবনের দায়ভার কাদের হাতে ? এইভাবে একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটবে আর দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবেনা আর কত দিন ??! আমরা নিরাপদ নির্মাণ ব্যবস্থা চাই এবং ক্মস্থলে নিন্ম শ্রেণীর শ্রমিকদের িশ্চিত নিরাপত্তা চাই । নিহতদের পরিবারের সমস্ত দায় - দায়িত্ব নেয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি । আর আহতদের সুস্থ হওয়া থেকে শুরু করে তাদেরও সকল দায়িত্ব নেয়ার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ কছি ।

ঢাকার অদূরে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে রানা প্লাজা নামের একটি বহুতল ভবন আজ বুধবার সকালে ধসে পড়ে। এ ঘটনায় বেলা একটা পর্যন্ত অন্তত ৮০ জনের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উদ্ধারকাজ চলছে। নয়তলা ওই ভবনে বিপণিকেন্দ্র, পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল। ধসে পড়ার সময় সেখানে বহু মানুষ ছিল বলে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জি প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ভবনের কয়েকটি তলায় পোশাক কারখানাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান ছিল। বিপুলসংখ্যক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছে। বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে বিপুলসংখ্যক সাধারণ মানুষ উদ্ধার তত্পরতায় অংশ নিচ্ছেন। ওই ভবন থেকে শত শত আহত মানুষকে উদ্ধার করে আশপাশের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে।



অন্তত ৮০ জন নিহত

ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) রুহুল ফোরকান প্রথম আলো ডটকমকে বেলা একটার দিকে জানান, তাঁরা ধারণা করছেন, মৃতের সংখ্যা এখন ৮০। এ সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিত্সক মনিরুজ্জামান বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম আলো ডটকমকে জানান, ওই সময় পর্যন্ত এই হাসপাতালের মর্গে অন্তত ৩০ জনের লাশ রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন) ভরতচন্দ্র বিশ্বাস দুর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত আছেন। একই সময়ে তিনি জানিয়েছিলেন, ধসে পড়া ভবন থেকে তাঁর উপস্থিতিতেই অন্তত আট থেকে ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নারী।  সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ৫০ জনকে নেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজনকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিত্সক। চারজনকে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। আর ১৭ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ২৪ জনকে প্রাথমিক চিকিত্সা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন জসিম উদ্দিন খান প্রথম আলো ডটকমকে এসব তথ্য জানান।

দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর

ভবন ধসের ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিত্সা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য সব কিছু করা হবে বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন, ১৮ দলীয় জোটের হরতাল না থাকলে উদ্ধার কাজ আরও দ্রুত করা যেত।

দুর্ঘটনার ব্যাপারে ফায়ার সার্ভিসের ডিজির বক্তব্য

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার আলী আহমেদ দুপুর ১২টার দিকে প্রথম আলো ডটকমকে জানান, ভবনটি পুরোপুরি মাটির সঙ্গে মিশে যায়নি। ধসে পড়া ভবনের নিচে কিছু ফাঁকা জায়গা আছে। সেখান দিয়ে ভেতরে ঢুকে উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় লোকজন উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। কিছু ফাঁকা জায়গায় অক্সিজেনের অভাব থাকায় উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে।  ডিজি জানান, ওই সময় পর্যন্ত ১০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ভেতরে পাঁচ থেকে ছয় হাজার লোক আটকা পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিশ্চিত করে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

নয়তলা ভবনে বহু প্রতিষ্ঠান

সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশেই নয়তলা রানা প্লাজা ভবনটি। এতে ভূগর্ভস্থ তলায় গাড়ি রাখার জায়গা। দ্বিতীয় তলার বিপণিকেন্দ্রে বহু দোকান ছিল। তৃতীয় থেকে সপ্তম তলা পর্যন্ত পোশাক কারখানা। এর ওপরের দুটি তলা খালি ছিল। ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় ছিল প্রথম তলায়। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বহুতল এ ভবনের কয়েকটি তলা নিচে দেবে গেছে। কিছু অংশ পাশের একটি ভবনের ওপর পড়েছে।

‘বোমার মতো আওয়াজ শুনলাম’

ভবনটি ধসে পড়ার ঘটনায় আহত হয়েছেন রাশিদা বেগম। তিনি ওই ভবনে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। স্বজনেরা তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি বলছিলেন, কারখানায় যাওয়ার কিছুক্ষণ পর বোমার মতো আওয়াজ হলো। তখন তিনি মেশিনের নিচে চলে যান। পরে আলো দেখে কীভাবে যে বাইরে আসেন, সে কথা মনে করতে পারছিলেন না রাশিদা। সঙ্গীদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা তিনি জানেন না।

ফাটলের পরও ঝুঁকি নেই জানিয়েছিলেন ইউএনও

ওই ভবনের তৃতীয় তলার একটি পোশাক কারখানায় ফাটল দেখা দিয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কবীর হোসেন সরদার সেটি পরিদর্শনে যান। তখন তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভবনটি ভেঙে পড়ার কোনো কারণ নেই।  এ ব্যাপারে আজ বক্তব্য জানার জন্য ইউএনওর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ

রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা। দুর্ঘটনার পর থেকে স্থানীয় লোকজন ও আটকা পড়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, ফাটল দেখা দেওয়ার পরও ভবনটিতে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলায় আজ এত মানুষ জীবনের ঝুঁকিতে পড়েছে।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার শোক প্রকাশ

এ ঘটনায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।


আহতদের জন্য রক্তের জরুরি আবেদন: 

সাভারে বহুতল ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় আহত অনেককে ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) নেওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্য জরুরি রক্তের আবেদন জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আগ্রহী ব্যক্তিদের রক্ত দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।




 উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো

Categories: Share

aas