Background

মহাপরিচালকের মহাকাণ্ড

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ একটি কর্মপরিকল্পনার প্রধান (লাইন ডিরেক্টর) হিসেবে দৈনিক এক লাখ ১২ হাজার ৮৮৭ টাকা করে সম্মানী নিয়েছেন। এভাবে ১২৪ দিনে সম্মানীর নামে তিনি এক কোটি ৩৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা নিয়েছেন বেআইনিভাবে। এ তথ্য মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়ের।
সিএজি কার্যালয়ের ফাপাদের (ফরেন এইড প্রজেস্টস অডিট ডাইরেক্টরেট) নিরীক্ষক দল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কার্যপরিকল্পনায় (অপারেশনাল প্ল্যান) ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৫৬ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকার অনিয়ম চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে আছে সরকারি ক্রয়বিধি না মেনে প্রশিক্ষণসামগ্রী কেনা, মাত্রাতিরিক্ত ফটোকপি, বেমানান সম্মানী ও অপরিকল্পিত কাজে অর্থ ব্যয়।
সিফায়েত উল্লাহ ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তিনি অধিদপ্তরের পরিচালক (শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) ছিলেন। মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, স্বাস্থ্য খাতের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক সিফায়েতের মতামতকে মূল্য দেন। তাঁদের অভিযোগ, উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক এ কে এম জাফরুল্লার যোগসাজশে আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। তবে এর সঙ্গে আরও অনেকেই জড়িত।
নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য জানার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্নীতি ধরা পড়বে না অথবা ধরা পড়লেও পার পেয়ে যাবেন এমন বিশ্বাস থেকেই এঁরা দুর্নীতি করে গেছেন। এঁদের সঙ্গে অন্য আরও অনেকের যোগসাজশ আছে। তিনি বলেন, মহাপরিচালকের অধীনে কয়েক হাজার চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন। তাঁর দুর্নীতির প্রভাব পড়ছে কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যায়ে। কর্তৃপক্ষের উচিত জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচি (এইচপিএনএসডিপি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি। ৩২টি কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কার্যপরিকল্পনায় ২০১১-১২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৮২ কোটি ২০ লাখ টাকা। টাকা ছাড় হতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে। জানুয়ারি থেকে জুন এই মূল বরাদ্দের ৯১ শতাংশ অর্থ খরচ করা হয়।
অনিয়মের ব্যাপারে সিফায়েত উল্লাহর মতামত জানতে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর দুই প্রতিবেদক তাঁর কার্যালয়ে যান। অভিযোগ শোনার পর তিনি বলেন, কার্যপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিস্তারিত তিনি জানেন না। কিছু ক্ষেত্রে তাঁর সই নকল করা হয়েছে। তবে এ ব্যাপারে তিনি কোথাও অভিযোগ করেননি।


 - দৈনিক প্রথম আলো, ১১-২-১৩

aas