অনেক হয়েছে, আর নয় - গ্রামীণ ব্যাংক ভাঙার সুপারিশ বন্ধ করুন !
সরকারের গঠিত গ্রামীণ ব্যাংক কমিশন ব্যাংকটিকে বিকেন্দ্রীকরণের নামে এর
কাঠামো ভেঙে টুকরা টুকরা করার সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে এর স্বাধীন ও
স্বতন্ত্র অস্তিত্ব অস্বীকার করে গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃত্ব সরকারের হাতে
নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছে তারা। আমরা সরকারের এই অনৈতিক, অবাস্তব ও গণবিরোধী
পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানাই। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, কমিশন কেবল সুপারিশ করেই ক্ষান্ত হয়নি, আগামী ২
জুলাই ‘গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ কাঠামো: কিছু বিকল্প’ নিয়ে একটি
কর্মশালারও আয়োজন করেছে, যার মূল বক্তা থাকবেন অর্থমন্ত্রী নিজে। যে
প্রতিষ্ঠানটি এর প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল
পুরস্কারের বিরল সম্মান বয়ে এনেছে, সেই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার এখতিয়ার
সরকারের আছে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে কমিশন সেগুলো প্রতিবিধানের
সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে পারত। সেসব না করে তারা এমন কিছু উদ্ভট সুপারিশ
করেছে, যা বাস্তবায়নের প্রশ্নই ওঠে না। গ্রামীণ ব্যাংককে পল্লী বিদ্যুৎ
সমিতির মতো ১৯ বা ততোধিক ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব কেবল অযৌক্তিক নয়,
হাস্যকরও বটে। মৌলিক প্রশ্ন হলো, এই কমিশন গঠনের আদৌ প্রয়োজন ছিল কি না? গ্রামীণ ব্যাংক
খারাপ চলছে, এই দাবি সরকারের পক্ষ থেকেও কেউ করেননি। যে গ্রামীণ ব্যাংকের
৯৫ শতাংশ মালিকানা ৮৪ লাখ গ্রাহকের, যাঁদের ৯০ শতাংশ গ্রামের দরিদ্র নারী;
মাত্র ৫ শতাংশ মালিকানা নিয়ে সেই ব্যাংকের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার এখতিয়ার
সরকারের আছে কি না? এত বছর পর ব্যাংকটির মালিকানা পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ল
কেন? সেটি কি এই কারণে যে, সরকার একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও ব্যাংকের একজন
চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে পারেনি? সেটি কি এই কারণে যে, আর্থিক
প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে দরিদ্র মানুষের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে? সেটি কি এই কারণে যে, ব্যাংকটি নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ
ইউনূস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
যেখানে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোই সরকার চালাতে পারছে না এবং প্রায়
প্রতিটি ব্যাংক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে হাবুডুবু খাচ্ছে, সেখানে গ্রামীণ
ব্যাংকটির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই বা কী থাকতে পারে? এর ফলে
বিশ্বজোড়া সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্ঠানটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, এর সঙ্গে
জড়িত ৮৪ লাখ গ্রাহকের জীবন-জীবিকাও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
তাই সরকারের কাছে জোর দাবি, অবিলম্বে গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর সব ধরনের
হস্তক্ষেপ বন্ধ করুন। সরকারের নিজের কর্তৃত্বে যেসব ব্যাংক ও আর্থিক
প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় মনোযোগী হোন। অনিয়ম-দুর্নীতি
বন্ধ করুন। গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর অযাচিত নাক গলানোর জন্য ইতিমধ্যে সরকার
নিজের ও দেশের অনেক ক্ষতি করে ফেলেছে। এই ক্ষতির পরিমাণ আর না বাড়ানোই
বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আগামী ২ জুলাই আহূত তথাকথিত কর্মশালা বাতিল করে
গ্রামীণ ব্যাংককে তার মতো চলতে দিন। অনেক হয়েছে, আর নয়।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো